নারীর বাইরে চলাফেরা, কথাবার্তা, পর্দা, সব বিষয় এ ইসলামের নির্দেশনা জানা উচিৎ।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত হুকুম আহকাম উল্লেখ করছি।
(ওমা তাওফিক ইল্লা বিল্লাহ)
▪মাহরাম কি?
যে সকল পুরুষের সামনে নারীর দেখা দেওয়া,কথা বলা জায়েজ এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন সম্পূর্ণ হারাম তাদের কে শরীয়তের পরিভাষায় মাহরাম বলে।
মাহরাম কারা?
এব্যাপারে
সূরা আন নূরের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীর মাহরাম নির্ধারিত করে দিয়েছেন।
▪গায়রে মাহরাম কি?
যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে।
বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী পূর্ণ পর্দা করে সামনে যাবে।
গায়রে মাহরাম কারা?
মাহরাম বাদে সমস্ত বিশ্বে-মহাবিশ্বে যত পুরুষ আছে সব গায়রে মাহরাম।
নিজ পরিবারে,
“চাচাত/খালাত/মামাত/ফুপাত সব ভাই,নিজ দুলাভাই,দেবর,ভাসুর,
(আপন,দাদা ও নানা শ্বশুর বাদে)
সমস্ত চাচা,মামা,খালু,ফুপা,শ্বশুর,
নিজ খালু, ফুপা এরা সবাই গায়রে মাহরাম।
তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করা।
মাহরাম ছাড়া সকল পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে।
এক নজরে মাহরাম পুরুষঃ
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
১/ স্বামী (দেখা দেওয়া,সৌন্দর্য প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে মাহরাম)
২/ পিতা, দাদা, নানা ও তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।
৩/ শ্বশুর, আপন দাদা ও নানা শ্বশুর এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।
৪/ আপন ছেলে, ছেলের ছেলে, মেয়ের ছেলে ও তাদের ঔরসজাত পুত্র সন্তান এবং আপন মেয়ের স্বামী।
৫/ স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র।
৬/ আপন ভাই,সৎ ভাই
৭/ ভাতিজা অর্থাৎ, আপন ভাইয়ের ছেলে এবং সৎ ভাইয়ের ছেলে।
৮/ ভাগ্নে অর্থাৎ, আপন বোনের ছেলে এবং সৎ বোনের ছেলে।
৯/ এমন বালক যার মাঝে মহিলাদের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই। (সূরা নূর-৩১)
১০/ দুধ সম্পর্কীয় পিতা, দাদা, নানা, চাচা, মামা এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।
১১/ দুধ ভাই, দুধ ভাইয়ের ছেলে, দুধ বোনের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান।
১২/ দুধ সম্পর্কীয় ছেলে, তার ছেলে, দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান। এবং দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের স্বামী। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫০৯৯, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১১৪৪)
১৩/ আপন চাচা, সৎ চাচা।
১৪/ আপন মামা,সৎ মামা। (সূরা নিসা-২৩)
উপরোক্ত পুরুষ যাদের সাথে দেখা করতে বা দেখা দিতে পারবে তারা ছাড়া অন্য সমস্ত পুরুষকে দেখা দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং হারাম।
গায়েরে মাহরাম বলতে কি বুঝায়,
তা আমরা অনেকেই জানি না !
যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য ইসলামি শারিয়্যাহতে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী ইসলামিক ভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করে সামনে যেতে হবে এবং নম্র কন্ঠে / ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলা যাবে না।
জানেন কি, গায়রে মাহরাম কারা?
সহজ ভাষায় মাহরাম পুরুষ বাদে সমস্ত বিশ্বে-মহাবিশ্বে যত পুরুষ আছে সবাই গায়রে মাহরাম।
নিজ পরিবারে চাচাত/খালাত/মামাত/ফুপাত ভাই, দুলাভাই, দেবর, ভাসুর, (আপন,দাদা ও নানা শ্বশুর বাদে) সমস্ত চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, খালু ও ফুপা শ্বশুর, নিজ খালু/ফুপা এরা সবাই গায়রে মাহরাম।
তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করা। মাহরাম ছাড়া সকল পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে।
ভাবছেন, এরা তো আপনার ফ্যামিলি, আপনার নিকটাত্মীয়, এদের সামনে যাওয়া কেন নিষেধ হবে….? নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা যা জানেন অবশ্যই আপনি তা জানেন না।
ইসলামের এই বিধান শুধুমাত্র আখিরাতের নাজাতেরই উপায় নয় বরং আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্তি এবং পবিত্রতারও রক্ষাকবচ।
নারীর ১৪ জন মাহরাম পুরুষ কারা এক নজরে দেখে নিন-
১. স্বামীঃ (দেখা দেওয়া, সৌন্দর্য প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে মাহরাম)
২. পিতা, দাদা, নানা ও তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ মাহরাম।
৩. শ্বশুর, আপন দাদা শ্বশুর ও নানা শ্বশুর এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ মাহরাম।
৪. আপন ছেলে, ছেলের ছেলে, মেয়ের
ছেলে ও তাদের ঔরসজাত পুত্র সন্তান এবং আপন মেয়ের স্বামী মাহরাম।
৫. স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র অর্থাৎ সৎ ছেলে মাহরাম।
৬. আপন ভাই, সৎ ভাই মাহরাম।
৭. ভাতিজা অর্থাৎ, আপন ভাইয়ের ছেলে এবং সৎ ভাইয়ের ছেলে মাহরাম।
৮. ভাগ্নে অর্থাৎ, আপন বোনের ছেলে এবং সৎ বোনের ছেলে মাহরাম।
৯. এমন বালক যার মাঝে মহিলাদের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই অর্থাৎ পাগল ও শিশু।
১০. দুধ সম্পর্কীয় পিতা, দাদা, নানা, চাচা, মামা এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ মাহরাম।
১১. দুধ ভাই, দুধ ভাইয়ের ছেলে, দুধ বোনের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান মাহরাম।
১২. দুধ সম্পর্কীয় ছেলে, তার ছেলে, দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান। এবং দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের স্বামী মাহরাম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫০৯৯, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১১৪৪)
১৩. আপন চাচা, সৎ চাচা।
১৪. আপন মামা, সৎ মামা।
উপরোক্ত পুরুষ যাদের সাথে দেখা দিতে পারবে তারা ছাড়া অন্য সমস্ত পুরুষকে দেখা দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন হারাম।
ভাবছেন, মাহরাম/গায়রে মাহরাম কি শুধু মেয়েদের জন্যই প্রযোজ্য, পুরুষরা স্বাধীন?
না, মোটেও তা নয়। পুরুষের জন্যও মাহরাম/গায়রে মাহরাম বিধান প্রযোজ্য।
পুরুষদের জন্য ১৪ জন মাহরাম নারীঃ
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
মায়ের মত ৫ জন,
নিজের মা, খালা, ফুফু, শাশুড়ি, দুধ-মা।
বোনের মত ৫ জন,
নিজের বোন, দাদি, নানি, নাতনি, দুধ-বোন।
মেয়ের মত ৪ জন,
নিজের মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, ছেলের বউ।
উপরোক্ত নারী যাদের সাথে দেখা দিতে পারবে তারা ছাড়া অন্য সমস্ত নারীকে দেখা দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং হারাম।
মেয়েদের চেহারাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
এক শ্রেণীর লোক নারীর চেহারাকে পর্দার অন্তর্ভুক্ত মনে করে না। অথচ চেহারা পর্দার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চেহারা পর্দার অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার ব্যাপারে সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত উল্লেখ করা হয়।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তবে যা সাধারণত প্রকাশমান’।
অথচ হিজাবের মূল আয়াত এটি নয়। পর্দার বিষয়ে এই আয়াত দ্বারা দলীল দেওয়া এবং এই আয়াতকেই একমাত্র দলীল মনে করা ভুল।
মূলত পর্দার আয়াত হল,
‘হে নবী আপনার স্ত্রী ও অন্যদেরকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন চাদর নিজেদের উপর টেনে নেয়’।(সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াত)
ইমাম সূয়ূতী র. বলেন, এটি সকল নারীর জন্য হিজাবের আয়াত । এতে মাথা ও চেহারা ঢাকা ওয়াজিব করা হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের স্ত্রীদের আদেশ করেছেন তারা যেন প্রয়োজনের মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় উপর দিয়ে পর্দা ঝুলিয়ে চেহারা ঢেকে রাখে এবং শুধু এক চোখ খোলা রাখে।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩/৮২৪)
উল্লেখ্য, সূরা নূরের ৩১ নং আয়তে মূলত সতরের সীমারেখা বর্ণনা করা হয়েছে। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে হাত এবং মুখ খোলা রাখার তথাও বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনাগুলোর অধিকাংশই নেহায়েত দুর্বল।
ইবনে জাওযী র. আরো বলেন, ইমাম আহমদ র.ও বলেছেন যে, প্রকাশ্য সৌন্দর্য হল কাপড়, আর নারীর শরীরের সব কিছু এমনকি নখও পর্দার অন্তর্ভুক্ত ।
( যাদুল মাসীর ৬/৩১)
আর ইবনে আব্বাস রা. এর ব্যাখ্যা গ্রহণ করলেও এই আয়াত পরবর্তীতে নাযিলকৃত হিজাবের আয়াত দ্বারা মানসুখ(রহিত) হয়েছে। শাইখ ইবনে তাইমিয়া র. সহ আরো কিছু মনীষীও এই মত পোষণ করেন।
আয়েশা (রাঃ) এর ‘ইফক’এর ঘটনায় উল্লেখিত হাদীস নসখের সুস্পষ্ট প্রমাণ। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তখন সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আমার নিকটে এসে আমাকে দেখে চিনে ফেলল। কেননা, সে আমাকে হিজাবের হুকুম নাযিল হওয়ার আগে দেখেছিলেন। সে তখন ইন্নালিল্লাহ বলল । আমি তার ইন্নালিল্লাহ বলার শব্দে জেগে উঠি । তখন আমি ওড়না দিয়ে আমার মুখ ঢেকে ফেলি’।( সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম হাদীস ২৭৭০; জামে তিরমিযী হাদীস ৩১৭৯)
প্রকাশ থাকে যে, সাহাবায়ে কেরাম হিজাবের আয়াত নাযিল হওয়ার পর চেহারায় পর্দা করতেন, যা আম্মাজান আয়েশা রা. এর উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । এছাড়া এ সংক্রান্ত আরো প্রমাণ পরবর্তী আলোচনায় আছে।
▪এহরাম অবস্থায় মহিলারা চেহারা খোলা রাখা
অনেকে মনে করে, ইহরাম অবস্থায় চেহারার পর্দা নেই। ফলে তারা অন্য সময় পর্দা করলেও ইহরাম অবস্থায় চেহারার পর্দা করেন না। প্রকৃত বিষয় এই যে, ইহরাম অবস্থায় চেহারায় কাপড় লাগানো নিষেধ, কিন্তু পর্দা করা নিষেধ নয় । উম্মুল মুমিনীন ও একাধিক সাহাবী থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তারা ইহরাম অবস্থায়ও চেহারার পর্দা করতেন।
আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম । পথচারীগণ আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত। তারা আমাদের নিকট আসলে আমরা মাথার উপর থেকে নেকাব চেহারায় ফেলে দিতাম । তারা চলে গেলে নেকাব উঠিয়ে নিতাম। (সুনানে আবূ দাঊদ হাদীস ১৮৩৩; ফাতহুল বারী ৩/৪৭৪)
হযরত ফাতেমা বিনতে মুনযির র. বলেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় চেহারা আবৃত করে রাখতাম । আবূ বকর সিদ্দীক রা. এর কন্যা আসমা রা. এর সাথে আমরা ছিলাম । তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেননি। (মুয়াত্তা মালেক: পৃঃ ২১৭২)
মোটকথা, সাহাবা-তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনের মাঝে কোন দ্বিমত ছিল না। এ ব্যাপারে তাদের মাঝে ব্যাপক আমল ছিল। এমনকি ইহরাম অবস্থায় যখন চেহারায় কাপড় লাগানো মহিলাদের জন্যও নিষিদ্ধ তখনও তারা চেহারার পর্দা করতেন ।
▪চোখ ঢাকাও পূর্ণ পর্দার অংশ
অনেকে অর্ধমুখ খোলা রাখেন । ভ্রুর উপর থেকে নাকের অর্ধেক পর্যন্ত খোলা রাখেন । এটাও ঠিক নয় । হযরত আয়েশা রা. ও ফাতিমা বিনতে মুনযির রা. এর উপরোক্ত বর্ণনায় পূর্ণ চেহারা ঢাকার কথা আছে। এছাড়া সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস রা. এবং উবাদা আসলামী রা. যা বলেছেন, তা আরো স্পষ্ট যে, তিনি বাম চোখও ঢেকে নিয়েছেন। শুধু ডান চোখটি দেখার স্বার্থে বের করে রেখেছেন । আর মাথার উপর থেকে নেকাব এমনভাবে ঝুলিয়েছেন যে, চোখও ভ্রু ঢেকে আছে। আজকাল নেকাবের জন্য পাতলা কাপড় পাওয়া যায়। যা ব্যবহারে ঢেকে যায়। আবার চলাচলেরও অসুবিধা হয় না। একান্ত ই ঢাকতে সমস্যা হলে ভিন্ন কথা।
▪মাহরাম ছাড়া সফর করা
আজকাল অনেক মহিলারা দূর দূরান্ত থেকে মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করে । দেশে এক শহর থেকে অন্য শহর এমনকি বিদেশ সফরও একাকী করে থাকে । এটা নাজায়েজ । শরীয়তের বিধান হল ৪৮ মাইল বা ততোধিকের সফর মহিলারা মাহরাম ছাড়া করবে না। অন্য মহিলাদের সঙ্গী হয়ে যাওয়ার ও অনুমতি নেই । অনেক মহিলারা মাহরাম ছাড়া হজ্বের সফরেও যায় । অন্য মহিলার সঙ্গী হয়ে যাওয়াকে বৈধ মনে করে । বিশেষ করে জিদ্দা থেকে কোন মাহরাম সঙ্গী হওয়ার মতো ব্যবস্থা থাকলে এবং দেশে বাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিলে পথিমধ্যে একাকী সফরকে দোষনীয় মনে করা হয় না । অথচ একাকী সফর করার বাপারে হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হজ্জের সফরেও একাকী যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ এসেছে।
(সহীহ মুসলিম ৯/১১০; সুনানে দারাকুতনী ২/২২৩)
▪মহিলাদের একাকী বাজার করা অনুচিত
অনেক পর্দাশীল মহিলা একাকী বাজার করে। অথচ একাজগুলো বাড়ির পুরুষদের দিয়ে সুন্দরভাবে হয়ে যায়। এ কাজ মহিলাদের নিজে নিজে করা কোরআনে কারীমের আয়াত-‘তোমরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান কর’-এর খেলাফ।
দ্বিতীয়ত কেনাকাটা করতে গিয়ে দোকানী পুরুষদের সাথে সরাসরি কথাবার্তা বলতে হয়, পুরুষদের ভীড়ের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এভাবে শরীয়তের হুকুম লঙ্ঘন করা হয়। এজন্য মহিলাদের এভাবে একাকী বাজার করা অনুচিত।
▪বাইরে সুগন্ধি ব্যবহার করা নাজায়েয
অনেক মহিলা বাইরে বের হওয়ার সময় পর্দা করে বের হয় বটে, কিন্তু পারফিউম বা অন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে। মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা নাজায়েয। এতে পর্দা লঙ্ঘন হয়। শরঈ পর্দা আদায় হয় না।
হাদীস শরীফে ওই সব মহিলার উপর অভিসম্পাদ করা হয়েছে যারা সুগন্ধি মেখে বের হয়।
এক হাদীসে এসেছে, যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের হল, অতঃপর লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করল যে, তারা যেন সুঘ্রাণ পায় সে ব্যভিচারিনী। (মুসনাদে আহমাদ ৪/৪১৪; মুসতাদরাকে হাকেম ২/৩৯৬; সুনানে আবূ দাঊদ ৪১৭৫)
▪আঁটসাঁট বোরকা পরা
কিছু মহিলা এমন বোরকা পরে যে, বোরকার উপর দিয়ে শরীরের আকার- আকৃতি বোঝা যায়।
কেউ কেউ একেবারে টাইটফিট বোরকা পরে।
এমন পোশাক পরে বাইরে রেব হয়, যা পরিধান করে বাইরে বের হওয়া নাজায়েয। এতে বোরকার হক আদায় হয় না।
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে উঠে এমন পোশাকে যারা বের হয় তাদেরকে হাদীস শরীফে কঠিন ভাবে সাবধান করা হয়েছে। এক হাদীসে তাদের উপর লানত করা হয়েছে। আর এক হাদীসে বলা হয়েছে, দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী তার মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণী লোক হচ্ছে, ঐ সকল নারী, যারা পোশাক পরিধান করা স্বত্বেও বিবস্ত্র। অন্যকে নিজের প্রতি আকর্ষণকারিনী ও নিজেও আকৃষ্ট। বুখতি উটের উঁচু কুঁজের মতো তাদের চুলের খোপা। এসব নারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে’।
▪আকর্ষণীয়ও কারুকার্যময় বোরকা পরিধান করা
আজকাল জাঁকজমকপূর্ণ বোরকার প্রচলন বেরেছে।
বিভিন্ন ডিজাইনের আকর্ষণীয় বোরকা। এধরনের জাঁকজমকপূর্ণ আকর্ষণীয় বোরকা পরা ঠিক নয়। মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার একটি মূলনীতি হল, বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী কোন কিছু ব্যবহার না করা । এজন্য সুগন্ধিসহ সকল আকর্ষণ সৃষ্টিকারী বস্তু ব্যবহার নাজায়েজ । কেউ কেউ পেন্সিল হিল ব্যবহার করে। এর ব্যবহারও এড়িয়ে চলা জরুরী।
▪পুরুষদের সঙ্গে সহাবস্থান
পুরুষদের সাথে একত্রে চাকরি বা পড়া-শুনার ক্ষেত্রে বোরকা পরাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়। অথচ গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে সান্নিধ্য ও তাদের সঙ্গে ওঠাবসা থেকে মহিলাদের দূরে থাকা কর্তব্য। তাই পুরুষের সহাবস্থানে শুধু বোরকা দ্বারা পর্দার হক আদায় হয় না । কেননা পর পুরুষের সাথে উঠা-বসা, লেনদেন জিনিসপত্রের আদান-প্রদান এবং অফিসিয়াল প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে অপরিচিতদের সাথে কথাবার্তা বলতে হয়। এতেও পর্দার খেলাফ হয়। এসকল ক্ষেত্রে বোরকা পরে থাকলেও পর্দার খেলাফ হয়। অবশ্য বোরকা পরিধানের কারণে বোরকা ছাড়া মহিলাদের চেয়ে গুনাহ কম হবে।
▪চাকুরি করা
ইসলাম নারী ও পুরূষ প্রত্যেকের যিম্মাদারী ও
দায়িত্ব পৃথকভাবে বন্টন করে দিয়েছে। বাইরের
সকল দায়িত্ব পিতা বা ভাই বা স্বামী তথা পুরূষ
গার্জিয়ানের কাঁধে অর্পিত। আর ঘরের কাজ বা
আভ্যন্তরীন দায়িত্বগুলো স্ত্রী তথা নারীর কাঁধে সমর্পিত।
মহিলাদের জন্য যথাসম্ভব ঘরে
অবস্থান আবশ্যক, বেগানা পুরূষদের সাথে সম্মিলন
ঘটে এমন যে কোন পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকা
জরূরী।
শরীয়তের মূলনীতির আলোকে নারীর জন্য পর-পুরূষের
সাথে অফিস-আদালতে, কোর্ট-কাচারি ইত্যাদিতে
চাকুরী করা একেবারেই গর্হিত ও নাজায়িয কাজ।
তাছাড়া এর দ্বারা পর্দা প্রথা যা শি’আরে ইসলাম
এবং একটি ফরয বিধান তারও মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে।
এছাড়াও আরো বিভিন্নভাবে শরয়ী আহকাম লংঙিত
হয়। এসব কারণেই মেয়েদের জন্য পর পুরূষের সাথে
কাজ করতে হয় এমন কোন চাকুরী করা নাজায়িয।
তবে রুজী-রোজগারের ব্যাপারে কোন মহিলার যদি
কোন ব্যবস্থাই না থাকে যেমন, উপার্জনক্ষম কোন
পিতা, ভাই বা স্বামী না থাকে, তাহলে পর্দার
সাথে অন্য কোন হালাল পেশা অবলম্বন করতে
পারে। (সূরা নিসা:৩৪, মিশকাত শরীফ:২৬৯, ফেকহী
মাকালাত:১/২৪৮)
▪অন্যদের সাথে কোমলতা প্রদর্শন ঠিক নয়
গায়রে মাহরামের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা নিষেধ নয় । কিন্তু এক্ষেত্রেও কোমলতা বর্জন করা কোরআনের নির্দেশ। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা পর পুরুষের সাথে কোমল স্বরে কথা বলো না । ফলে সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে।(সূরা আহযাব:৩২)
সুতরাং প্রয়োজনীয় কথা-বার্তার ক্ষেত্রে কোমলতা বর্জন না করাও পর্দার খেলাফ। আর প্রয়োজন ছাড়া গায়রে মাহরামের সাথে কথা না বলাই কাম্য। বিশেষ কোন ফেতনার আশংকা থাকলে কথা বলা জায়েয হবে না।
(শরহে মুসলিম- নববী কৃত ২/১২১আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৬; আল মুফাসসাল৩/২৭৬)
▪শরঈ পর্দার শর্তাবলি
শর্তগুলো উপরে বিক্ষিপ্তভাবে এসেছে সহজকরণের লক্ষে তা সংক্ষিপ্তভাবে আবারো প্রদত্ত হল। অনেক মা-বোনই পর্দা করে কিন্তু অনেকে জানেনই না পূর্ণ পর্দা কাকে বলে? এর জন্য কি কি শর্ত রয়েছে? তাই পূর্ণ পর্দার শর্তাবলি উল্লেখ করা হল।
১.কোন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া। এক্ষেত্রে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পূর্ণ শরীর আবৃত করা, মুখ ও চোখের উপর নেকাব রাখা, হাত মোজা ও পা মোজা পরিধান করা।
২.বোরকার কাপড় ভালো ও শালীন হওয়া, আকর্ষণীয় কারুকাজ ও নকশা না থাকা। অর্থাৎ বোরকা আকর্ষণীয় না হওয়া। আজকাল বিভিন্ন প্রিন্টের বোরকা পাওয়া যায় যথা সম্ভব এ থেকে এড়িয়ে থাকা। তদ্রƒপ কালো কাপড়ের উপর আকর্ষণীয় কাজও যেন না হয়।
৩.বোরকার কাপড় মোটা হওয়া। এমন পাতলা না হওয়া যে, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা যায়।
৪.অধিক ঢিলাঢালা বোরকা হওয়া। এমন আঁটসাঁট না হওয়া যে, বোরকা শরীরের সাথে লেগে থাকে কিংবা পরিধানের পর শরীরের কোন অঙ্গ প্রকাশ পায়।
৫.বাইরে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার না করা। এটাও শরঈ পর্দার অংশ।
৬.এমন অলংকার পরে বাইরে না যাওয়া, যা পরিধান করে চললে আওয়াজ হয়। যেমন-নুপুর, কাঁচের চুড়ি ইত্যাদি।
৭.চিকন ও লম্বা হিল বিশিষ্ট জুতাপরিধান না করা। যেন চললে স্বাভাবিকতা বজায় থাকে।
৮.উঁচু করে খোপা বা চুল না বাঁধা।
৯.গায়রে মাহরামের সাথে অপ্রয়োজণীয় কথা বলা ও সালাম দেওয়া-নেওয়া থেকে বিরত থাকা। প্রয়োজনে বলতে হলে কোমলতা পরিহার করা।
১০.সফরসম দূরত্বে কিংবা ফেতনার আশংকা থাকলে মাহরাম পুরুষের সঙ্গে যাওয়া।
▪দুলাভাই দেবর ভাসুরদের সঙ্গে পর্দা করা আবশ্যক
কেউ কেউ মনে করে দুলাভাই,দেবর, মামাতো,চাচাতো ভাই এ ধরনের গায়রে মাহরাম আত্মীয়দের সাথে পর্দা না করলেও চলে। অথচ ইসলামে তাঁদের সবার সঙ্গেই পর্দার বিধান রয়েছে সর্বাবস্থায় তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হারাম।
বিশেষ করে দুলাভাইদের সাথে ঠাট্টা মশকরা করা।
দেবরদের সাথে নিয়মিত কথাবার্তা বলা
এসব চরম ফেত্নার কারন হতে পারে।
হযরত ওকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা মহিলাদের নিকট [একাকি] প্রবেশ করা থেকে বিরত থাক।
আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি বলল-‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবরের ব্যাপারে কি নির্দেশ?
তিনি বললেন-“দেবর তো মৃত্যুতুল্য” ।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৪৯৩৪, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৫৮০৩)
এছাড়া কোন গাইরে মাহরাম পুরুষ এর সাথে একাকী হওয়াও জায়েজ না।
হযরত ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়।
(সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬৫)
▪উকিল বাবার সাথে পর্দা করা আবশ্যক
বিয়ের সময় যাকে উকিল বানানো হয় তাকে সমাজে পাত্র-পাত্রীর উকিল বাবা বলা হয়। তার সাথে পরবর্তীতে অবাধে দেখা-সাক্ষাত করা হয়। এমনকি মাহরামের অন্তর্ভুক্তও মনে করা হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল। গায়রে মাহরামকে উকিল বানানো হলেও তার সাথে দেখা-সাক্ষাত পূর্বের মতোই হারাম।
▪ধর্মের বোন ডাকা ও পর্দা না করা
অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে গায়রে মাহরাম মহিলাকে অনেকে বোন ডাকে। সমাজে একে ‘ধর্মের বোন’ বলে অভিহিত করা হয়। ধর্মের বোনের সাথে আপন বোনের মতোই আচরণ করা হয় পর্দা করা হয় না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মীরাসও দেওয়া হয়। গায়রে মাহরাম মহিলার সাথে এ ধরনের সম্পর্ক বৈধ নয়। ধর্মের বোন বলতে যা বোঝানো হয় শরীয়তে তা স্বীকৃত নয়। তাদের পরস্পর দেখা-সাক্ষাত নাজায়েয।
▪মহিলাদের মসজিদে গমন
মহিলাদের মসজিদে যাওয়াকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিরুৎসাহিত করেছেন। তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম বলেছেন।
(আবু দাউদ ১/১২৩ নং ৫৭০
মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৭ নং ২৬৫৮৪)
পরবর্তীতে আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. সহ আরো সাহাবী মহিলাদের মসজিদে যাওয়াকে অপছন্দ করেছেন (সহীহ বোখারী ১/১২০; সহীহ মুসলিম১/১৮৩ মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা ৫/২২-২০৩)
মহিলাদের মসজিদে নামায আদায়ের মধ্যে বিশেষত বর্তমান যুগে পর্দার হক আদায় হয় না। মাসজিদে নামাজের উদ্দেশ্যে তাই ঘর হতে বের হবার কোন মানে হয়না। উত্তম ছেড়ে অধম এর উপর আমল করার মানে নেই।
▪মাহরাম পুরুষের সামনে সতরের ব্যাপারে উদাসীনতা
আমাদের দেশে মহিলাদের অনেকে শাড়ী পরে থাকে। এতে অনেক সময় পেট ও পিঠ খোলা থাকে ঘরে মাহরাম পুরুষের সামনে একে গুনাহ মনে করা হয় না। অথচ এর দ্বারা সতর খোলার গুনাহ হয়। মহিলাদের পেট-পিঠ সতরের অন্তুর্ভুক্ত। মাহরাম পুরুষের সামনেও তা ঢেকে রাখা ফরয।
মাহরাম পুরুষের জন্য মহিলার মাথা, চেহারা, হাত, গলদেশ ও হাঁটুর নিচের অংশ সতর নয়। তবে তাদের সামনেও যতটুকু সম্ভব আবৃত থাকাই উত্তম।
বিশিষ্ট তাবেয়ী হাসান বসরী বলেছেন, ‘নিজ ভাইয়ের সামনেও নারীর ওড়না ছাড়া থাকা উচিত নয়।’
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৯/৩৭৩)
প্রখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. বলেছেন, ‘মাহরাম পুরুষের সামনে মেয়েদের মাথা ঢেকে রাখাই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। অবশ্য মাহরাম তা দেখে ফেললে গুনাহ হবে না।’
[প্রাগুক্ত, কিতাবুল আসল ৩/৪৮;
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৯১]
▪জাহেলী যুগের মতো ওড়না ব্যবহার
জাহেলী যুগে ওড়না ব্যবহারের নিয়ম ছিল, নারীরা মাথায় ওড়না দিয়ে তার দুই প্রান্ত পৃষ্ঠদেশে ফেলে রাখত। ফলে গলা ও বক্ষদেশ অনাবৃত থাকত। ইসলামের প্রথমযুগে আল্লাহ তা‘আলা জাহেলী যুগের এই কু-প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। কোরআন মজীদে এসেছে-‘তারা যেন বক্ষদেশে ওড়না ফেলে রাখে’ (সূরা নূর;৩১)
আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হয়, তখন (তৎক্ষণাৎ আমলের জন্য মহিলা সাহাবিগণ নিজেদের-পেটিকোট) নিয়ে তার পাশ থেকে কেটে তা ওড়না রূপে পরে নেয়।’ (সহীহ বুখারী ৮/৩৪৭)
বর্তমান জাহেলীযুগ পূর্বের জাহেলী যুগও ছেড়ে গেছে। অতি আধুনিক মেয়েরা তো ওড়না ব্যবহারই করে না। কেউ কেউ ব্যবহার করলেও জাহেলী যুগের মতো গলাও বক্ষদেশ খোলা রাখে। সুতরাং ঘরে-বাইরে সর্বত্র মহিলাদের ওড়না পরিধানের নিয়ম এটিই। এমনকি ফাতাওয়া শামীতে ঘরের মাহরামদের সামনে মহিলাদের মাথায় কাপড় রাখাকে মুস্থাহাব বলা হয়েছে। (ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/৪০৪)
▪পালক সন্তানের সাথে পর্দা করা
পালক সন্তান আপন সন্তানের মতো নয়। বাবার জন্য বালেগ হলে পালিত কন্যা এবং মায়ের জন্য বালেগ হলে পালিত পুত্র সাথে পর্দা করা ফরজ হয়ে যাবে।
হ্যাঁ, সন্তানের দুই বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে যদি নিজের বুকের দুধ খাওয়ায় সেক্ষেত্রে সন্তানও হয়ে যায়। আর দুধ সন্তানের সাথে দেখা দেওয়া জায়েয । দুধ পান না করিয়ে থাকলে বালেগ হবার পর পালক সন্তানের সাথে দেখা দেয়া জায়েয হবে না। পালক সন্তান নিজের সন্তানের মতো নয় তা সূরা আহযাবের ৪ও৫ নং আয়াতে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে।
▪মেয়েদের পর্দার বয়স
অনেকে মনে করে হায়েজ না দেখা দেয়া পর্যন্ত পর্দার বয়স হয় না। এই ধারণা ঠিক নয়। মেয়েরা বড় হয়ে ওঠলেই পর্দার বয়স শুরু হয়ে যায় ।
ফাতাওয়ায়ে শামীসহ অন্যান্য ফাতাওয়া গ্রন্থে নয় বছর অতিক্রম করলেই পর্দার বয়স হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই এই বয়স থেকেই পর্দা করা জরুরী।
বিশেষ করে যদি তাদের দেখতে বড় লাগে তো পর্দা করানোই লাগবে।বিশেষ করে ৮/৯ বছরের পর হতে মেয়েরা ফিজিক্যাল হ্যারাসমেন্ট এর শিকার হয় বেশি।
তাই তাদের সেফটির জন্যে হলেও তাদের আগে থেকেই বোরকা পড়ানো। পর্দা করানো উচিত।
আর হায়েজ হবার পর থেকে পর্দা করা পুরোপুরি ফরজ।
(ফাতাওয়ায়ে শামী:১/৪০৮;৩.৩৭ আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮)
▪ছেলেদের পর্দার বয়স
ছেলেদের যখন নারীদের সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন হতে আরম্ভ করে তখন থেকেই তার সঙ্গে পর্দা করতে হবে। সূরা নূরের ৩১নং আয়াতে এসেছে তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে কিন্তু তাদের স্বামীর নিকট অথবা যৌন কামনামুক্ত পুরুষ ও বালক যারা নারীদের আবৃত অঙ্গ-প্রতঙ্গ সম্পর্কে সচেতন নয়।” (সূরা আন নূর ৩১)
এই চেতনা সাধারণত কত বছর বয়সে হয় এ নিয়ে ফকীহগণের বিভিন্ন মত আছে। ইমাম আহমদ র. সহ অনেকেই দশ বছর বলেছেন। তবে ফাতাওয়া শামীতে বয়োপ্রাপ্তির ন্যূনতম সীমা ১২ বছর বলা হয়েছে। সুতরাং ছেলের ১২ বছর বয়স হলেই তার সাথে নারীদের পর্দা করতে হবে। তবে দশ বছর বয়স থেকেই শুরু করা ভাল।
প্রসঙ্গত বর্তমানে এ বিষয়ে অনেক বেশী সতর্ক ও সচেতন হওয়া উচিত।
(ফাতাওয়ায়ে শামী : ৩/৩৫; আলমুফাসসাল: ৩/১৮০-১৮১)
▪মেয়েদের সাথে মেয়েদের পর্দা
অন্য নারীর সামনে একজন নারীর সতর নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত । এ অংশ কোন বিশেষ ওযর ছাড়া কোন নারীর সামনেও খোলা জায়েয নয়। আর পেট, পিঠ, বুক এগুলোও প্রয়োজন ছাড়া অন্য নারীর সামনে অনাবৃত করা অনুচিত। আর ফিতনার আশংকা হলে তা আবৃত রাখা জরুরী।
( আল মুফাসসাল: ৩/২৬৫; ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৭১)
▪বিধর্মী নারীর সাথে মুসলিম নারীর পর্দা
বিধর্মী নারীর সামনে মুখ, হাত ও পা ছাড়া পুরো শরীর এমনকি চুলও ঢেকে রাখা জরুরী। তাদের সামনে শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশ করা গুনাহ।
(ফাতাওয়ায়ে শামী: ৬/৩৭১; ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৪/১৯৬)
▪বেগানা পুরুষদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা
এ প্রসঙ্গে সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত স্মরনীয়।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, অর্থ-‘হে নবী! আপনি মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন দৃষ্টিকে অবনত রাখে।’অর্থাৎ পর পুরুষের দিকে না তাকায়।
হযরত উম্মে সালমা রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ছিলাম, হযরত মায়মুনা রা. ও ছিলেন। ইতিমধ্যে অন্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম এলেন। এটা ছিল হেজাবের হুকুম নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘তোমরা দু’জন তার থেকে পর্দা কর। আমরা বললাম, সে তো অন্ধ। আমাদেরকে দেখছে না এবং আমাদেরকে চিনেও না। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছ না?
(সুনানে আবূ দাঊদ হাদীস ৪১১২)
উক্ত আয়াতও হাদীসের আলোকে ফকীহগণ বলেন, কুনজরে পুরুষের দিকে তাকানো মহিলাদের জন্য নাজায়েয। তদ্রপ আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এমন গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করাও নিষেধ। আর কোন ধরনের ফিতনার আশংকা না হলে সাধারণ দৃষ্টিতে পর পুরুষের দিকে তাকানো নাজায়েয নয়। তবে এক্ষেত্রে না তাকানোই ভালো।
দ্বীন শিখার জন্য দ্বীনি কিতাব পড়া উচিত।
(ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৭১; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২২৭; আল মুফাসসাল: ৩/২২৭; জামেউ আহকামিন নিসা:৪/২৮৩)