একটি ছোট শিশু অঙ্কুর থেকে ধীরে ধীরে মায়ের কোলে বেড়ে ওঠে, মায়ের কোলই তার প্রথম শিক্ষাঙ্গণ/পাঠশালা। প্রতিটি শিশু উত্তম আদর্শ গ্রহণ করার যোগ্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কারণ প্রতিটি শিশুই ফুলের কলির মত। তার মধ্যে রয়েছে সুন্দর ফুল হয়ে সবার মাজে সুবাস ছড়ানোর যোগ্যতা। কিন্তু তার বাবা-মা, ভাই বেরাদার,আত্মিয় স্বজন তাকে যে পথ দেখায় সে পথেই সে হাঁটতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে।
সন্তানকে লালন পালন করা পিতা মাতার গুরু দায়িত্ব। শিশুকে আদর সোহাগ ভালোবাসা যেভাবে দিবে তেমনি তাকে প্রয়োজন মাফিক শাসনও করবে। আমাদের সমাজ আজ এ দু দিকেই প্রান্তিকতার শিকার। যা অত্যন্ত দু:খজনক। আমাদের একটু গাফিলতি বা সীমাহীন শাসন তাকে বিপথে ঠেলে দিতে পারে। আমাদের অনকে ভাই একটু ভুলের কারণে আজ এর জন্য খেসারত দিতে হচ্ছে। শিশুরা একটু দুষ্টুমি করেই থাকে। তবে মনে রাখতে হবে তার দুষ্টুমি যেন আল্লাহকে অসন্তুষ্ট না করে। আমাদের প্রাণ প্রিয় রাসূল এ ব্যাপারে আমাদের সামনে উত্তম অনুপম রেখে গেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: মুুমিনগন,তোমরা নিজেদের এবং পরিবার পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর ফেরেশতাগন। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ তা অমান্য করে না এবং যা করতে বলা হয় তাই করে। (আত-তাহরীম :৬৬/৬)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত: ঘরের লোকেরা যেখানে দেখেন তোমরা সেখানে তোমাদের ছড়ি জুলিয়ে রাখ, এটি তাদের জন্য আদব বা শিষ্টাচার। (তাবারানী: ১০৬৭০¬)
অন্য হাদীসে এসেছে: আমর ইবনে আস রা: থেকে বর্ণিত তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাজের আদেশ দাও যখন তারা সাত বছর বয়সের হবে। আর যখন তারা দশ বছরের সন্তান হবে তখন তাদেরকে প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।(আবু দাউদ:৪৯৫)
সন্তানকে ভালো কাজের আদেশ দিবে, তাকে শাসন করবে তার অবাধ্যতার মাাত্রানুযায়ী। প্রয়োজনে তাকে প্রহার করবে। এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র সিমালংঘন করা যাবেনা। একজন অভিবাবক সন্তানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবে সে যেন কোনক্রমেই পথচ্যুত হতে না পারে। আমরা অনেক সময় শাসনের নামে সন্তানের উপর জুলুম করে থাকি যে কারণে অনেক সময় সে অবাধ্য হয়ে যায়। রাসূল সা: একদিকে শাসনের কথা বলেছেন অন্যদিনে তিনি সন্তানের প্রতি দয়া, সহনশীল,ন¤্র হওয়ার কথাও বলেছেন।
এব্যপারে হযরত হজরত আবু হুরায়রা রা: এর হাদীসে চমৎকার একটি দৃশ্য চিত্রায়িত হযেছে।
একবার রাসূল সা: আপন দৌহিত্র হযরত হাসান রা: এর গালে চুমু খেলেন। ঐ সময় রাসূলের নিকট “আকরা” বিন হাবেস বসে ছিলেন। আমার দশটি ছেলে আছে, আমি তাদের কাউকে কখনো চুম্বন করেনি। তিনি (সা:) তার দিকে তাকিয়ে বললেন যে দয়া করেনা তার প্রতি দয়া করা হয়না।(বুখারী ৫৯৯৭ ও মুসলিম ২৩১৭)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে শিশুর প্রতি দয়া করবে আল্লাহ তার প্রতি আরো বেশী দয়া করবেন। আর যে দয়া করবেনা আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না। শিশুর প্রতি করুনা ও চুম্বন করা ইত্যাদি আদাব শিষ্টাচারের অন্তভুক্ত, দয়ার বহি: প্রকাশ।
কেউ কোন অপরাধ বা অশোভনীয কাজ করলে রাসূল কি করতেন তার একটি অসাধারণ আমরা হাদীসে পেয়ে থাকি।
হযরত আনাস রা: বলেন: একবার এক গ্রাম্য বেদুইন সাহবী মসজিদে পেশাব করে দিলেন। কিছু লোক তার দিকে দৌড়ে গেল ( একটু ভৎসনা) । রাসূল বললেন তাঁকে তার মত ছেড়ে দাও, বাধা দিওনা। সে পেসাব করার পর রাসূল এক বালতি পানি এনে ঢেলে দিলেন। তারপর ঐ বেদুইনকে বললেন মসজিদ পবিত্র স্থান নামাজ তেলাওয়াত ও আল্লাহর জিকিরের জন্য, মসজিদ পেসাব করার জন্য নয়। (মুসলিম : ১৬৩¬)
প্রিয় পাঠক একটু ভেবে দেখুন রাসূল সা: কতইনা সুন্দরভাবে উপদেশ দিয়েছেন। এই ঘটনাটি বর্তমানে আমাদের সমাজে হলে কি অবস্থা হতো? হ্যাঁ এটাই ছিল আমার প্রিয় নবীর শিক্ষা। তিনি ছিলেন আমাদের আদর্শ মুআল্লিম।
আনাস রা. নবীজীর খেদমত করতেন, কিন্তু নবীজী কখনো তার গায়ে হাত তোলেননি, এমনকি কখনো এমন কথাও বলেননি যে, আনাস! তুমি এই কাজটি কেন করেছ, আর ঐ কাজটি কেন করনি ? অথচ আমরা পানি আনতে একটু দেরি হলেই কত খারাপ ব্যবহার করি।