ইতিকাফ: আত্নগঠনের দিবস দশক

মানুষ মানেই ব্যস্ত, মানুষ মাত্রেরই জীবিকার পেছনে দৌড়ানোর প্রয়োজন থাকে। দুনিয়ার স্বার্থ ও জীবনের দায় থেকে কারোরই যেন সামান্য ফুরসত নেই। কিন্তু সবকিছুর পরও মুসলমানকে দিনে পাঁচবার আল্লাহর ঘরে কপাল ঠেকাতে হয়। শত ব্যস্ততার পরও এই সময়টুকুতে একজন মুসলিমের সবকিছু জুড়ে থাকেন, আল্লাহ। তাঁর সামনে অনুগত হয়ে বান্দা এ সামান্য সময়ে নিজের অক্ষমতা স্বীকার করে, তাঁর কাছে অনুগ্রহ কামনা করে। তবে এই স্বাভাবিক নিয়মিত ইবাদতের বাইরেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য রমজানুল মুবারকে আল্লাহর সান্নিধ্যলাভের এক বিশেষ সময় ও ইবাদতের সুন্নাহ রেখে গেছেন।

দশটা দিন। পৃথিবীর সবকিছু ছেড়ে বান্দা হয়ে যায় আল্লাহর মেহমান। জীবনের টানাপোড়েন বা সম্পর্কের পিছুটান, সব ত্যাগ করে বান্দা কেবল তার স্রষ্টার প্রেমে ডুবে যায়। কী বিধিবদ্ধ প্রেম, প্রেমাষ্পদের ঘর থেকে বের হবারও অনুমতি নেই। দিনমান তাঁর গুণগানে, তার প্রেমের সুধা পানে ব্যস্ত থাকে প্রেমিক। তিলাওয়াতে, সালাতে আর ইবাদত-অনুভবে এ দিবস দশক হয়ে ওঠে বান্দার আত্মগঠনের অন্যতম সোপান।

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহ. বলেন: ‘আমি কোন আলিমের নাম জানি না, যিনি রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফকে সুন্নাহ বৈ কিছু বলেছেন।’

ইমাম ইবনু শিহাব যুহরি রহ. বলেন: ‘বর্তমান মুসলমানদের দেখলে আশ্চর্য লাগে; তারা ইতিকাফ ছেড়ে দিয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা আগমনের পর আমৃত্যু ইতিকাফ পালন করে গেছেন।’

ইতিকাফের সময় ও গুরুত্ব

ইতিকাফের ইচ্ছে থাকলে রমজানের বিশতম দিনে সূর্যাস্তের আগে বান্দাকে আবাসনের নিয়তে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে আল্লাহর ঘরে ঢুকে যেতে হবে। এরপর ঈদের রাতে সূর্যাস্তের পর পর্যন্ত টানা দশদিন সেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অবস্থান করতে হবে।

প্রতিজন মুসলমানের জন্যই আল্লাহর ঘরে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে এর উপকারিতা বিবিধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাতের দিকে তাকালে এর গুরুত্বের অনুভব টের পাওয়া যায়। তিনি রমজানে মদিনায় অবস্থান করলে অবশ্যই পুরো দশ দিন ইতিকাফ করতেন। আর কোন তাকে বাইরে সফরে যেতে হলে পরবর্তী বছর তিনি সেটা কাযা করে নিতেন। একবার রমজানে ইতিকাফ ছুটে গেলে তিনি এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েন যে, শাওয়ালেই মদিনায় ফিরে এসে ইতিকাফ কাযা করে নেন। যে-বছর তার অন্তর্ধান ঘটে, সে-বছর রমজানেও তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন।

ইতিকাফকালে রাসূল কী করতেন?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফের ইচ্ছা করলে মসজিদে তাঁর জন্য বিছানা পাতা হতো। একটি তাঁবু খাটিয়ে সেখানে তাঁর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে আসা হতো। নামাজের সময় ব্যতীত বাকি সময় তিনি সেই জায়গায় নির্জনে থাকতেন। আল্লাহ তাআলার ধ্যানে ও নিমগ্ন ইবাদতে মশগুল হতেন। আম্মাজান হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। আমি মসজিদে তাঁর জন্য একটি তাঁবু খাটিয়ে দিতাম। ফজরের নামাজ পড়েই তিনি সেখানে অবস্থান গ্রহণ করতেন।’ (সহিহ বুখারি: ২০৩৩)

মানবিক প্রয়োজন ব্যতীত এ সময়ে তিনি বাইরে বের হতেন না। অজু ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন হলে কাছাকাছি কোথাও গিয়ে সেরে আসতেন। তাঁর খাবার-পানীয় এবং অন্যান্য নিত্যদ্রব্য মসজিদে দিয়ে যাওয়া হতো। এ-সময় তিনি কারো জানাযার শরিক হতেন না, তেমনি কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যেতেন না; বরং সর্বক্ষণ তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ধ্যানে ব্যস্ত ও মগ্ন থাকতেন।

উরওয়া ইবনুয যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বলেন: ‘ইতিকাফকারী ব্যক্তির জন্য এটাও জরুরি যে, সে কারো জানাযায় যাবে না, অসুস্থ কাউকে দেখতে বেরোবে না। স্ত্রী সহবাস করবে না এবং নিতান্ত মানবিক প্রয়োজন ব্যতীত বাইরে বের হবে না। ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা এবং জামে মসজিদে অবস্থান করা জরুরি।'(সুনানে আবু দাউদ: ৫২)

কেন করব ইতিকাফ?

১. লাইলাতুল কদর তালাশের জন্য:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইতিকাফের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য থাকত লাইলাতুল কদরের তালাশ করা। শুরুর দিকে তিনি সারা মাস ইতিকাফ করতেন, এরপর শুধু মধ্যদশকের ইতিকাফ করতেন; সর্বোপরি যখন তিনি জানলেন লাইলাতুল কদর শেষ দশকে, তখন থেকে নিয়মিত তিনি রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন।

তাছাড়া এ-রাতে আল্লাহ তাআলা পরবর্তী বছরের জন্য তাকদির স্থির করেন বলেও মতামত দিয়েছেন হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ‘এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’-এর তাফসিরে বলেন, এখানে রাত বলতে লাইলাতুল কদর উদ্দেশ্য। এ রাতে নির্ধারিত হয় বান্দার পরবর্তী বছরের রিজিক, মৃত্যু এবং বৃষ্টি ও ঝড়ের পরিমাণ। এমনকি কে কে আল্লাহর ঘর যিয়ারতে যেতে পারবে, সেটাও এ রাতে সিদ্ধান্ত হয়ে যায়।

২. আত্মসংশোধন:

বান্দার প্রতিটি নেক আমলের প্রথম সম্পর্ক তার অন্তরের সাথে। যদি তার মন ঠিক না থাকে, যদি সে দুনিয়ার নানা কাজে হৃদয়ের আবেদন নষ্ট করে ফেলে, তাহলে হতে পারে তার কোন আমলই আল্লাহর কাছে গৃহিত হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জেনে রাখ, মানবদেহে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা দেহই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায়, গোটা দেহই তখন অসুস্থ হয়ে পড়ে। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল ক্বলব (অন্তর)। (সহিহ বুখারি: ৫২)

অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ, অতিরিক্ত নারী-সংশ্রব, অপ্রয়োজনীয় কথা এবং মাত্রাতিরিক্ত ঘুম মানুষের অন্তরকে মেরে ফেলে। এর ফলে আল্লাহর সাথে তার মুলাকাতের যোগ্যতা শেষ হয়ে যায়। এ-জন্য আল্লাহ বিভিন্ন বিধানের মাধ্যমে আমাদের ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছেন। নানাবিধ ইবাদাত দ্বারা বান্দা চাইলে তার মৃতপ্রায় অন্তরকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। প্রবৃত্তির পূজা বাদ দিয়ে, চাইলে সে এক আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে পারে। আর ইতিকাফ সে-সব রিফ্রেশিং ইবাদাতের অন্যতম প্রধান সুন্নাহ।

হজরত আবদুল কাদির জিলানি রহ. বলেন: ‘বান্দার হৃদয় যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সংশোধিত হয়ে যায়। যখন ইবাদাত ও আনুগত্যের মাধ্যমে সে নিজেকে আল্লাহর জন্য নিবেদিত করে ফেলে, তখন তার প্রতিটি কথা ও কাজে পরিশুদ্ধ অন্তরের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সে কাউকে ঠকায় না, কাউকে ওজনে কম দেয় না এবং কারো নিশ্চিতপ্রাপ্য হক কখনও মেরে দেয় না।’ (আল-ফাতহুর রাব্বানি:২৫৭ )

অন্তরকে আল্লাহর সাথে জুড়ে দিতে পারলে কোনখানেই বান্দা লুকোচুরির আশ্রয় নেয় না। কাড়ি কাড়ি সম্পদ, সুন্দরী নারী, বিলাসবহুল গাড়ি বাড়ি বা কোটি কোটি টাকার ব্যাংক চেক, তাকে পরাস্ত করতে পারে না। তার চোখে সর্বদা ভাসে জান্নাত। সর্বদা সে ভাবে, কবে আমি রবের দেখা পাব, কবে তাঁর আরশের পাশে সবুজ পাখি হয়ে উড়ে বেড়াব!

৩. রোজা বেঁচে যায় প্রবৃত্তির আক্রমণ থেকে:

রমজানে রোজা রাখাটা একজন মুসলিমের প্রধান ও প্রথম কর্তব্য। কিন্তু রোজা রেখেও আমরা অনেক সময় আমাদের ভেতরের প্রবৃত্তি থেকে রেহাই পাই না। না চাইতেও অনেক অযথা কথা, অযথা কাজ এবং বিবাদ-বিসংবাদে জড়িয়ে পড়ি, যা আমাদের আন্তরিক শুদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে দেয়। কিন্তু ইতিকাফ করলে বান্দা সহজেই এসব অনভিপ্রেত কাজবাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারে। কথার মাধ্যমে, কাজ ও আচরণের রূঢ়তায় সে কাউকে কষ্ট দেয় না। বরং সুযোগ থাকে বিভিন্ন ইবাদত, জিকির এবং তিলাওয়াতের ফুল-ফসলে নিজের রোজাকে সুশোভিত করে নেয়ার।

৪. দুনিয়া বিমুখতার শিক্ষা হাসিল হয়:

একজন প্রবল প্রতাপশালী ব্যক্তি, রমজানের শেষ দশকে মসজিদে মাটিতে শুয়ে আছে। অঢেল বিত্তের মালিক হয়েও সে ফ্লোরে থালা রেখে খাবারের দিকে নুয়ে সেগুলো তুলে মুখে দিচ্ছে। এভাবে ইতিকাফ পৃথিবীর সবচে ক্ষমতাধর ব্যক্তির ভেতরও দুনিয়া বিমুখতার শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়। পার্থিব খ্যাতির নেশায় বা সম্পদের স্তূপ জমানোর লালসায়, সে আর আগ্রহ খুঁজে পায় না।

হজরত ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন: ‘যুহদ হলো পরকালে কাজে আসে না, এমন সব দুনিয়াবি কাজকর্ম, চিন্তা ও উচ্চারণ পরিত্যাগ করা’।

ইমাম ইবনু শিহাব যুহরি রহ. বলেন: ‘সত্যিকার যাহেদ বা দুনিয়াবিমুখ তো সে, হারাম তার ধৈর্য অতিক্রম করেনা আর হালাল যার শুকরিয়া ভুলিয়ে দেয় না।’ (আল-ফাতহুর রাব্বানি:২৫৭ )

হারাম কখনো সেজেগুজে সামনে এসে ধরা দিলেও, যে বান্দা নিজের প্রবৃত্তির প্রতি ধৈর্য দেখাতে পারে, আর আল্লাহর হালাল নিয়ামতে ডুবে গিয়েও যে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা ভুলে যায় না—সে-ই প্রকৃত যাহেদ, সত্যিকার দুনিয়াবিমুখ মুমিন।

৫. নিষ্ঠার ইমতেহান নেবার সুযোগ হয়:

নিজের নিষ্ঠার পরিমাপের জন্য হলেও ব্যক্তিকে কখনো একাকী হতে হয়। মানুষের ভেতর থাকলে, সমাজের সাথে বাস করলে, কখনো কখনো মনের অজান্তে অদৃশ্য এক রিয়াবৃত্তি দ্বারা তাড়িত হয় মানুষ। এ জন্য এতেকাফ হতে পারে ব্যক্তির নিষ্ঠা পরীক্ষার অন্যতম সময়। আমি আল্লাহর প্রতি কতোটা নিবেদিত, ইবাদাতের ক্ষেত্রে কতোটা সনিষ্ঠ—ইতিকাফের একান্ত এ সময়টাতে সেটা খানিক পরখ করে নেবার সুযোগ হয়।

বিশিষ্ট তাবিয়ি হজরত হাসান আল বাসরি রহ. বলেন: ‘যদি পারতাম এভাবে ইবাদত করতে যে, আমার দুই কাঁধের ফেরেশতারাও আমাকে দেখবে না, রিয়া থেকে বাঁচতে আমি সেটাই করতাম।'(তাতিরুল আনফাস মিন হাদিসিল ইখলাস:২৫৭ )

পুর্বসুরী পুণ্যবান আলিমদের অনেকে এমনভাবে নিজের ইবাদাতের ব্যাপারে একাগ্রতা অবলম্বন করতেন যে, তাদের স্ত্রীরা পর্যন্ত জানতে পারত না, তারা কী কী ইবাদত করেন। ঠিক তেমনি, ইতিকাফের দশটি দিন বান্দা সকলের অগোচর হয়ে কেবল আল্লাহর গোচরে একান্ত হয়ে থাকে। এ সময় চাইলে সে নিজেকে যাচাই করে নিতে পারে। ইবাদাতের প্রতি, তিলাওয়াতের প্রতি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগঠনমূলক আমালের প্রতি সে কতখানি মুখলিস, সেটা এই সময়ে সে কিছুটা পরিমাপ করে নিতে পারে।

৬. মসজিদের প্রেম হৃদয়ে বসে যায়:

মসজিদ হলো দুনিয়াতে রাব্বুল আলামিনের একমাত্র দূতাবাস। পৃথিবীর নিয়মমতো বহিঃরাষ্ট্রে যেমন নানান দেশের দূতাবাস থাকে। সেটা যে দেশেই হোক, নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের মানুষেরা সেখানে নিজেদের রাষ্ট্রীয় সুবিধা লাভ করতে পারে, তেমনি মসজিদ যদিও দুনিয়াতে দেখি আমরা, কিন্ত বাস্তবে তা উর্ধ্বজগতের রাজাধিরাজের জাগতিক দূতাবাস। সেখানে পরকালের নানান সুবিধা হাসিল করে নেবার, নানা অফার লুফে নেবার এবং এই দূতাবাসে দুনিয়াতে বসেও, সে দেশে নিজেদের সুন্দর নিবাস গড়ে ফেলবার সুযোগ পাওয়া যায়।

দীর্ঘ দশ দিবসের ইতিকাফে বান্দার ঝুলিতে যা অর্জিত হয়, তা কেবল দশ দিনের পাথেয় নয়; বরং ইহজগত ছাপিয়ে পরজগতেও বান্দা এর সুফল ভোগ করতে পারে। সমগ্র জগতের অধিপতির বাড়িতে সে মেহমান থাকে, বাহ্যদৃষ্টিতে তার মেহদানদারি দেখা না গেলেও প্রতিদান দিবসে আল্লাহ এমন বান্দার জন্য উত্তম মেহমানদারির ব্যবস্থা করে রাখেন।

মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস যার গড়ে ওঠে, সে অন্তরে এক আশ্চর্য বীজ বপন করে নেয়। যে বীজের ফলাফলে সে কী পাবে, সে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তির হৃদয় মসজিদের সাথে বাঁধা পড়ে থাকে, সে পরকালে আল্লাহর আরশের ছায়াতলে জায়গা পাবে’। (সহিহ বুখারি: ৬৬০)

মসজিদে থাকার অভ্যাস হয়ে গেলে ব্যক্তি নামাজের আগে পরে ইচ্ছে করেই একটু বেশি সময় সেখানে অবস্থান করবে। এতে সে সময়টুকুও তার নামাজের ভেতর গন্য হয়ে যাবে। ফেরেশতারা পুরোটা সময় তার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করতে থাকবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দীর্ঘসময় যারা মসজিদে অবস্থান করে, পরকালে তাদের পুলসিরাত পার হওয়া সহজ হবে। এ-ছাড়া এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করলে বান্দার গুনাহ মাফ হতে থাকে। তেমনি তারা সহজে তাকবিরে উলার সহিত নামাজ পড়ার সুযোগ পায়, ফলে জাহান্নাম ও নিফাক থেকে মুক্তির পরোয়ানা লাভ করতে পারে। তারা প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করার সুবিধা পায়। তেমনি মসজিদের কোণে নির্জনে একাকী ইবাদত করার ফলে, তারা আল্লাহর প্রতিবেশী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। (সুনানে তিরমিজি: ২৪১)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে কোথায় আমার প্রতিবেশীরা বলে ডাকতে থাকবেন। ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করবে, হে প্রভু! কারা আপনার প্রতিবেশী? আল্লাহ তাআলা বলবেন, যারা মসজিদ আবাদ রেখেছিল’। (সহিহ বুখারি: ৭৪০)

একদা মুসলমানদের একটি দল যুদ্ধ থেকে বিপুল পরিমাণ গনীমত নিয়ে ফিরলে এক সাহাবি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এদের মতো এত অল্প সময়ে এত বেশি গনীমতের সম্পদ নিয়ে ফিরতে আমি আর কোন দলকে দেখি নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দর করে অজু করে মসজিদে যায়। ফজরের নামাজ আদায় করে এবং মসজিদে অবস্থান নেয়, এরপর চাশতের নামাজ পড়ে সেখান থেকে বের হয়, সেই ব্যক্তি এরচেয়ে দ্রুত সময়ে এরচেয়ে বেশি সম্পদ অর্জন করে নেয়’। (সহিহ ইবনু হিব্বান: ২৫৩৫)

৭. বর্জন করা যায় অশুদ্ধ স্বভাব:

কেউ সিগারেটে অভ্যস্ত, কেউ-বা নিয়মিত গান শোনে। খারাপ বন্ধুদের সাথে কারো উঠাবসা, কারো-বা অবৈধ সম্পর্কে গুনাহের ঋণ জমেছে ঢের। সে-সব যুবকের জন্য ইতিকাফ হতে পারে ফিরে আসার সুবর্ণ সুযোগ। চাইলেও এই দশ দিন তারা পূর্বের অন্যায়গুলো করতে পারবে না। শয়তান ও প্রবৃত্তির শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে বান্দা যদি লাগাতার দশ দিন আল্লাহর ধ্যানে পড়ে থাকে, তাহলে পর্বততুল্য বদঅভ্যাসগুলোকেও ঝেঁটিয়ে বিদায় করা সম্ভব।

ইতিকাফকারী ব্যক্তির জন্য তো হালাল অনেক কাজ করারই সুযোগ নেই। সে চাইলেই কারো জন্য উপহার কিনতে, কারো উপহার গ্রহণ করতে বা বন্ধুর সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎে যেতে পারবে না। সেখানে সে সিগারেট টানার জন্য, টিভি দেখার জন্য বা কোন মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেরোলে তার ইতিকাফ তো নষ্ট হবেই, উল্টো সে আল্লাহর ঘরের সম্মান নষ্ট করার কারণে বড় গুনাহগার বলে বিবেচিত হবে। অথচ এ সময়টা তার নবজীবনের সূচনা ঘটতে পারে। তার সামনে খুলে যেতে পারে রবের সাথে সম্পর্কের নতুন দরোজা।

৮. ধৈর্যের পাঠশালা যেন:

চাইলেই কেউ নিজেকে আটকে ফেলতে পারে না। মানুষের মন যেন উড়াল পঙ্খিরাজ। একটা বয়সে সে বাধাহীনভাবে উড়তে চায়। এমন মানুষকে আল্লাহর সামনে একান্ত নিমগ্ন করে বসানো বড় কষ্টের কাজ। কিন্তু ইতিকাফ হতে পারে সেই পুণ্যময় অভ্যাস গঠনের অন্যতম ইবাদত।

বাড়িতে সে বিচিত্র আহারে অভ্যস্ত ছিল। ফাস্টফুড, স্ট্রিটফুড ছাড়া যেন তার মুহূর্ত চলে না। এমন মানুষ ইতিকাফের সময় মসজিদে বসে এক পদের তরকারিতে আহার সারছে। আলুর টুকরোগুলো তাকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের কথা মনে করাচ্ছে, মুরগির গোশত তার চোখে এঁকে দিচ্ছে চিকেনের বাহারি খাবারের চিত্র। কিন্তু তার বাইরে যাওয়া মানা। সে ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে প্রতিটি প্রতি বেলায়, প্রতিটি লোকমায়।

কেউ দামি বিছানায় শুয়ে অভ্যস্ত। এসি রুম আর দামি ফোমের বেড না হলে তার দুচোখের পাতা এক হয় না। ইতিকাফ তাকে সহনশীল হিসেবে গড়ে তোলার কোর্স খুলেছে যেন। মসজিদে তার জন্য সামান্য একটি কাঁথা বিছিয়ে ফ্লোরে ঘুমানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রতি রাতে তাকে তার নিজের বিছানা নিজেকেই করতে হয়। মাটির সাথে তার সম্পর্ক খেতে গেলে গাঢ় হয়, শুতে গেলে গভীর হয়ে আসে। সে ধৈর্যের সবক পায়, সহনশীলতার দীক্ষায় কোঁচড় ভরে নেয় পুণ্যের ফসলে।

সে ধৈর্য ধরে নিজের পার্সোনালিটি লস হয়ে যাবার। বাসায় তার একান্ত ব্যক্তিগত রুম ছিল। যা খুশি করতে পেরেছে, যখন খুশি ঘুমাতে বা বিশ্রাম নিতে পেরেছে। কিন্তু মসজিদে আজ বড় এক ঘরে অন্য অনেকের সাথে থাকতে হচ্ছে তাকে। বিচিত্র বয়সের এবং বিচিত্র স্বভাবের মানুষের সাথে থাকতে খুবই ইতস্তত লাগছে তার। কিন্তু সে প্রতিনিয়ত ধৈর্য ধারণ করে যাচ্ছে।

প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে দেখা নেই কয়েক দিন হয়ে যায়। যাকে ছাড়া সে এক মুহূর্ত থাকতে পারে না, এক লোকমা খেতে পারে না বা একটি রাত বাহিরে কাটাতে পারে না। দশটা দিন কত বেলা তাকে ছাড়া খেতে হচ্ছে, তার স্মরণে একা একা রাত গুজরাতে হচ্ছে। চাইলেও প্রভুর ঘর ছেড়ে তার ঘরে যাওয়া যাবে না। কোন কড়া নিয়মের ধৈর্যের পাঠশালায় যেন তাকে ভর্তি করে দেয়া হয়েছে।

৯. আল্লাহর সান্নিধ্যে নিবিড় হওয়া:

পুরো পৃথিবী ত্যাগ করে এ সময় বান্দা আল্লাহর জন্য নিবিড়-নিবেদিত হয়ে যায়। তার ইবাদাতে মনোযোগ আসে এবং জগতবিচ্ছিন্নতার সুযোগে সে জগতপতির সাথে একান্ত হতে পারে। ব্যক্তির ধর্ম ও নীতিগত উন্নতির প্রথম সোপান হলো, একাকি খোদার কাছাকাছি হওয়া। এটা বান্দার আল্লাহকে পাওয়ার প্রথম স্তর। এ-জন্যই তো নবুওয়াতের পূর্বে হেরা গুহায় রাসূলের আত্মাকে একাকিত্বের রঙে রঙীন করা হয়েছিল।

ইবনুল জাওযি রহ. বলেন: ‘দেখলাম কিছু লোক খুব নামাজ পড়ে, তিলাওয়াত করে ও রোজা রাখে; কিন্তু তাদের হৃদয় যেন ছুটন্ত ঘোড়া। আবার কিছু লোক নামাজ পড়ে সামান্য, রোজাও রাখে পরিমিত, কিন্তু তাদের অন্তর বড় সুনিবিড়, একান্ত এবং শান্ত-সুস্থির। আমি বুঝলাম, আল্লাহকে পেতে হলে বেশি ইবাদত নয়, অধিক নির্জনতার দরকার।'(সইদুল খাতির: ৩৫৫)

মুতাকিফের ইবাদাত

বেশি বেশ জিকির করা:

জিকিরের ফজিলত কতখানি, সেটা নিয়ে হয়ত আলাদা রচনা তৈরি করা সম্ভব। হাদিসের এ সংক্রান্ত অধ্যায়ের পাতাগুলো উল্টালে অসংখ্য বর্ণ্না মিলবে এ ব্যাপারে। তবে ইতিকাফকারী ব্যক্তির জন্য সবচে বড় অর্জন হতে পারে, জিকির। অন্যান্য ইবাদত হয়ত সারাদিন করা সম্ভব নয়, কিন্তু চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে সর্বক্ষণ যে ইবাদত করা যায়, সেটা হলো জিকির। ছোট ছোট শব্দে আল্লাহর তাসবিহ, তাহমিদ এবং তাহলিলের মাধ্যমে বড় বড় প্রতিদানের ভাগিদার হওয়ার সুযোগ একমাত্র জিকিরেই আছে। এ-জন্য মসজিদে অবস্থানের এই দশটা দিনে ইতিকাফকারী ব্যক্তির সারাদিনের রুটিন থাকা চাই, জিকির আর জিকির।

জিকির কেবল সওয়াবের মাধ্যমই নয়; জিকিরে হৃদয় সতেজ হয়, জিকিরে মৃত্যু সহজ হয় এবং জিকিরে জীবনে ও রিজিকে বরকত হয়। হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা একবার রাসূলের কাছে খাদিম তলব করলে রাসূল তাকে বলেছিলেন, জিকির করতে। যাকে আমরা জিকরে ফাতেমি বলে চিনি। রাসূল বলেছেন, সর্বোত্তম মৃত্যু হলো তার, যার জিহ্বা মৃত্যুকালেও আল্লাহর স্মরণে সতেজ ছিল। (সহিহ বুখারি: ৬৩১৮, জামে তিরমিজি: ২৩২৯)

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: ‘একদিন ফজরের পর আমি ইবনে তাইমিয়ার বাড়িতে গেলাম। তিনি নামাজ শেষ করলেন। আমি ভাবলাম, এবার তিনি বেরোবেন। কিন্তু তিনি প্রায় অর্ধদিবস পর্যন্ত জিকির করে এরপর বের হলেন। আমাকে দেখে বললেন, এটা আমার সকালের নাশতা। আমি সকালে ঠিকঠাক নাশতা না করতে পারলে আত্মিক শক্তি পাই না।’ (সালাহুল উম্মাহ ফি উলুয়্যিল হিম্মাহ: ৩/৬৬)

কুরআন তিলাওয়াত:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাসে, পনেরো দিনে বা এক সপ্তাহেও কুরআন খতম করতে বলেছেন। তাই ইতিকাফকারীর জন্য এই দশটা দিন কুরআনের সাথে নিজের সম্পর্ক ঝালিয়ে নেবার দারুণ সময় হতে পারে। সারাটা বছর আমরা ব্যস্ত থাকি। কুরআনের সাথে আমাদের যেন কোন যোগাযোগ নাই। অথচ আল্লাহর কিতাবের সাথে বান্দার সম্পর্ক হবে প্রথম ও প্রধান। কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সময় পার করলে ইতিকাফের দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তির বিরক্তিও আসবে না। সাচ্ছন্দ্যে সে পুরোটা সময় আল্লাহর কথা বুঝতে এবং অনুধাবন করতে করতে কাটিয়ে দিতে পারবে। কেবল এক খতম করে ক্ষ্যান্ত দিলে হবে না; বরং সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে, যেন তিলাওয়াতহীন একটু সময়ও আপনার অযথা কেটে না যায়।

তবে এতটা দ্রুত পড়া যাবে না, যা কুরআনের সম্মান নষ্ট করে। কুরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কালাম, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। তিনি এখানকার প্রতিটা বাক্য আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন। অতএব মনোযোগ সহকারে ধীরে সুস্থে কুরআন তিলাওয়াত করাই উত্তম। মোটামুটি অর্থ বুঝে কুরআনের সম্মান বজায় রেখে তিলাওয়াত করে যেতে হবে। আহলুস সুন্নাহর উলামায়ে কেরামের সর্বস্বীকৃত মতে, দ্রুত তিলাওয়াতের চেয়ে তারতিল ও তাদাব্বুরের সাথে অল্প তিলাওয়াত করা উত্তম।

অনেকটা এমন যে, কোথাও কিছু পাথরের সাথে কয়েকটি হিরে জহরত রেখে দেয়া হলো। এক লোক খুঁটে খুঁটে চিন্তা ভাবনা করে কেবল হিরেগুলোকেই তুলে নিচ্ছে, আরেকজন একপাশ থেকে চিন্তাভাবনা ছাড়াই দেদারসে পাথর খুটে যাচ্ছে। দেখা গেল, যে মাত্র একটা তুলতে পেরেছে, কিন্তু ভেবে চিন্তে, সে হিরেই পেয়েছে। আর অপরজন অনেকগুলো পাথর তো তুলে ফেলেছে, কিন্তু এখানে একটা হিরেও তার কপালে জোটেনি।

সাহস করে এ সময়টায় প্রয়োজনীয় সুরাগুলো মুখস্ত করে নিতে পারেন। কেউ চাইলে কুরআনের ধারাবাহিক হিফজও শুরু করতে পারেন। নীরবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে শুরু করলে বেশ ভালো পরিমাণ হিফজ হয়ে যেতে পারে। সারাবছর এমন নির্জন নির্ঝঞ্ঝাট সময় আর না-ও আসতে পারে।

অধিক পরিমাণ ইস্তিগফার:

আফসোসের কথা হলো, অনেকে ইতিকাফে বসেও পরচর্চা ও গীবতের বদস্বভাব ত্যাগ করতে পারে না। অথচ সারাবছরের গুনাহ থেকে মাফি চাওয়ার জন্য, এরচেয়ে সুন্দর সময় সে আর পাবে না। আল্লাহর ঘরে বসে, সারাদিন তিলাওয়াতে সালাতে থেকে, সে যদি হাত তুলে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তার পুরো বছরের গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। এ জন্য এ সময়টাতে নিজের কৃতকর্মের প্রতি সলজ্জ হয়ে আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘যে চায়, পরকালে তার আমলনামা তাকে সন্তুষ্ট করুক, সে যেন বেশি বেশি ইস্তেগফার করে।'(মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ১৭৫৭৯)

দুরুদ শরীফ পাঠ করা:

আল্লাহ তাআলার পর সবচে বেশি ভালোবাসতে হবে যাকে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁকে ভালোবাসার অন্যতম দাবি এবং প্রকাশ হতে পারে, তাঁর প্রতি অধিক পরিমাণে দুরুদ পাঠ করা। অন্যান্য জিকির এবং তিলাওয়াতের সাথে রুটিনে রাখতে পারেন দৈনন্দিন বড় অংকের দুরুদ পাঠের বিষয়টি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে সকালে দশবার এবং সন্ধ্যায় দশবার আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করবে, পরকালে সে আমার শাফাআত লাভ করবে।’ (আল-মুজামুল কাবির: ১/৬১)

নির্জনতার বিষ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সবচে নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত, (তন্মধ্যে একজন হলো) যে লোক হারামে অন্যায় কাজ করে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৮৮২)

এখানে হারাম বলতে সম্মানিত সময় বা সম্মানিত স্থান উদ্দেশ্য। মুতাকিফ ব্যক্তির জন্য ভয়ের ব্যাপার হলো, তার ক্ষেত্রে দুটো বিষয়ই একত্র হচ্ছে। সে রমজানের শেষ দশকের মতো সম্মানের সময়ে আল্লাহর ঘরের মতো সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অবস্থান করছে। ফলত এ সময়ের ইবাদাতের মূল্য যেমন বেশি, তেমনি এ সময়ের পাপের শাস্তিও তত নিকৃষ্ট হতে পারে। গনীমতের মতো সুন্দর এ নির্জনতার সম্বল কারো জন্য নিরেট বিষ হয়েও উঠতে পারে। এমন কিছু অশুভ আমলের সম্ভাবনার কথা বলব এবার:

১. অনর্থক আলোচনা:

দীর্ঘ সময়ে ধৈর্য ধরে ইবাদাতে মগ্ন থাকা অনেকের জন্য কষ্টের হতে পারে। হতে পারে সে নতুন পরিচিত প্রতিবেশীর সাথে খোশলাপে জমে উঠবে। এতে ইতিকাফের সম্মান ও আবেদন ক্ষুণ্ণ হয়ে উল্টো এই নির্জন অবসর তার জন্য অন্যায়ের কারণ হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘মানুষের সবচে বেশি গুনাহ হয়ে থাকে জবানের মাধ্যমে।’ (আল-মুজামুল কাবির: ৩/৭৮)

হজরত আতা ইবনু আবি রাবাহ রহ. বলেন: ‘পুর্বসুরী আলিমরা কুরআন এবং হাদিসের বাইরে সকল কথাবার্তাকেই অপ্রয়োজনীয় জ্ঞান করতেন। অর্থাৎ এমন সব আলোচনা, যাতে কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই দীনের সম্পৃক্ততা নেই। তেমনি জীবিকার জন্য, জীবনের জন্য এবং উপার্জনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কথার বাইরে অতিরিক্ত কথাবার্তাকেই তারা অতিরিক্ত অযথা কথা ভাবতেন।’ (ইয়াহইয়া উলুমিদ দীন: ১১১)

একজন ইতিকাফকারী পরিবার ছেড়ে, সন্তান, বাবা-মা, স্ত্রী এবং প্রিয়জনদের ত্যাগ করে, দুনিয়ার সকল ঝামেলা ও ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্ত হয়ে এসে যদি সেই দুনিয়াবি কথাবার্তাতেই মুখর থাকে, তাহলে সেটা কেমন বোধের ব্যাপার হতে পারে? জিকিরের জন্য আসলাম, তিলাওয়াতের জন্য, সিয়াম এবং সালাতের জন্য আসলাম। এসে যদি সেই গুনাহই হলো, যদি অর্জনের বদলে উল্টো বিসর্জনই হয়ে গেল, তাহলে কেন সব ছেড়েছুড়ে এই মসজিদে পড়ে থাকা?

২. অতিরিক্ত আহার:

মানুষ কেন খাবার খায় জানেন? আসুন হজরত আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদের জীবন থেকে সেটা শিখে আসি। যিনি ইবাদাতের প্রয়োজন ছাড়া কখনো খাবার গ্রহণ করতেন না। নামাজে গাফলতি বুঝতে পারলে, খানিক আলস্য অনুভব করলে খাবার কমিয়ে ফেলতেন। অনেক সময় খাবার একেবারে বন্ধ করে দিতেন। আবার যখন দুর্বলতার কারণে নামাজে ঢিলেমি এসে যেত, তখন তিনি পুনরায় খাবার গ্রহণ করতেন। ইবাদত ছিল তাদের মূল বস্তু, খাবার ছিল নিছক একটি মাধ্যম; যাতে শরীরে শক্তি আসে, নামাজে একাগ্রতা আসে এবং আলস্য ও দুর্বলতা কাটিয়ে স্রষ্টাতে নিমগ্ন হওয়া যায়, সেজন্যই তারা খাবার খেতেন।

ইতিকাফের সময়টুকু বান্দার জন্য গনীমতস্বরূপ। খাবারের আয়োজনে বা খাবার গ্রহণে অতিরিক্ত ঢিলেমি করে, গলা পর্যন্ত উদরপুরো করে এই সময়টা নষ্ট করে দেয়ার কোন অর্থ নেই। হজরত আবুল ওয়াফা ইবনু আকিল রহ. স্বাভাবিক সময়েই আটা খামিরা তৈরি করে রুটি বানিয়ে খেতেন না। ইলম অর্জনে এবং ইবাদাত-আনুগত্যে এতোটাই মনোযোগ এবং গুরুত্ব দিতেন যে, আটা পানিতে গুলিয়ে সেটা খেয়েই পেট বাঁচাতেন। আর আমি আপনি রমজান মাসে, মসজিদে ইতিকাফ করা অবস্থায়ও বাহারি আইটেমের উদরপূর্তি না করতে পারলে বাঁচি না। আমাদের কি আরও এ ব্যাপারে ভাবা উচিত না? (উলুয়্যুল হিম্মাহ: ১৫১)

৩. অনর্থক সংশ্রব:

ইসলাম প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার এবং তার হকের প্রতি খেয়াল রাখতে জোর নির্দেশ দেয়, কিন্তু কারো সাথে এতটা দোস্তি ও অন্তরঙ্গতা ইসলাম পছন্দ করে না, যার ফলে সারারাত কেটে যায় গল্পগুজবে এবং অযথা আলাপ-প্রলাপে। দীনি বা আত্মগঠনের ফায়দা ব্যতীত যে-কোন অতিরিক্ত আলাপের জন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করাকে ইসলাম মন্দ চোখে দেখে। প্রতিবেশীর সাথে এই অতিমাত্রিক সখ্যতা অনেক সময় রাতের ইবাদাত থেকে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ সারাদিনের আমল থেকেও ব্যক্তিকে বঞ্চিত করে ফেলতে পারে।

কিন্তু আমাদের মসজিদে ইতিকাফের চিত্র দেখলে মনে হয়, যেন কোথাও রাজনৈতিক আড্ডা বসেছে, কোথাও গল্পের আসরের আয়োজন করা হয়েছে। এই নিয়ম পালনের ইতিকাফের রূপ-রঙ এক আর নববি ইতিকাফের ধরন-প্রকৃতি বড়ই আলাদা কিসিমের।

সম্ভাবনার কথাই বলছি

বদলে ফেলুন নিজেকে। একেবারে যাকে বলে আমূল পরিবর্তন। আপনাকে যেন আপনার পরিবার, আপনার সমাজ এবং পরিচিতজনরা একেবারে নতুন রূপে আবিষ্কার করে। ইতিকাফের এই সময়টা আপনার জীবনের মোড়পরিবর্তনের স্মৃতি হয়ে থাকুক।

হজরত মুনযির ইবনু আবিদ রহ. বলেন: ‘উমর ইবনু আবদিল আজিজ খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জুমুআর সালাতের পর। আসরের নামাজ পড়ে তিনি মসজিদ থেকে বেরোলে তাকে কেউই চিনতে পারে নি। তিনি এতটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলেন।’ (আল-ইস্তিযকার: ১/২০৭)

মাত্র কয়েক ঘন্টার কথাই তো। হজরত উমর ইবনু আবদিল আজিজ নিজেকে একেবারে পাল্টে ফেললেন। আর আপনার হাতে নিজেকে পরিবর্তনের আস্ত দশটা দিন পড়ে আছে। আপনি কেন আত্মবদলের একটা সাহস করতে পারছেন না? আপনার কি উচিত না, শক্ত ও দৃঢ় সংকল্প করে নিজের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া? আপনি কি আল্লাহর প্রেমে এই রাত্রিজাগরণের কথা ভুলতে পারবেন? পবিত্র হবার পর আপনি ঈদপরবর্তী সময়ে আবার অপবিত্র হয়ে পড়বেন? আপনি কি আবার দাড়ি ছাঁটবেন? আবারও সেই পুরনো গুনাহের দিকে ফিরে যাবেন? দীর্ঘ দশ দিনের এই আসমানী পাঠশালা আপনাকে কি সত্যিই দীনে ফেরাতে পারবে না তবে? শক্ত হোন, মুষ্টি বদ্ধ করুন!

আপনিই এ যুগে আল্লাহর বিশেষ বান্দা হতে পারেন। হয়ত আপনার ভেতরেই সুপ্ত কোন ব্যাপার নিহিত আছে। হয়ত আপনার অগোচরেই খোদা আপনার দ্বারা দীনের বড় কাজ করাবেন বলে স্থির করে রেখেছেন। নিজের কারণে নিজে পিছিয়ে পড়বেন না, নিজেকে ছোট, ক্ষুদ্র ও হতভাগা ভাববেন না। আশাবাদী হোন, সংকল্প করুন এবং পরিবর্তনের তরীতে পা রেখে চলতে শুরু করুন এবং আল্লাহর বিশিষ্ট শাকের বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।

শেষ দশকে লক্ষ্য রাখুন দশ কাজ

১. অন্যকে প্রাধান্য দিন:

খাবারে, অজুতে, গোসলে ও হাজতে নিজে অধিকার না খাটিয়ে অন্যকে এগিয়ে দিন। তাকে সামনে রাখুন এবং তার মনোরঞ্জনের খেয়াল করুন। নিজের সুবিধা তালাশ না করে অপর ভাইয়ের সুবিধার দিকে নজর দিন। এই একটি গুণ সমাজে কতটা ক্রিয়াশীল হতে পারে, বলে বুঝানো সম্ভব নয়। প্রথমত এটা পুণ্যবানদের, সদাচারী বান্দাদের বিশেষ আখলাক। এর দ্বারা পরস্পরে প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়। সম্প্রীতির মাত্রা বাড়ে এবং একে অপরের মধ্যকার ঝগড়া-বিবাদের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।

২. বিতর্ক এড়িয়ে চলুন!

যে-সব কাজে ও কথায় পরস্পর বিতর্ক উস্কে ওঠে, সে-সব বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। শাখাগত মাসআলা বা সামান্য কোন আমলের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া শুরু করবেন না। এতে বিশেষ কোন উপকার না হলেও, পরস্পরে বিভেদ এবং শত্রুতা তৈরি হবে নিশ্চিত।

৩. মোবাইল পরিত্যাগ করুন:

আশ্চর্য এক রোগ পেয়ে বসেছে আমাদের সমাজকে। মসজিদে আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্জন হয়েও আমরা যেন শত জনতার মাঝে বসবাস করি। অনলাইনে বিতর্ক জুড়ে দিই, মন্তব্যের পসরা সাজাই বা দূরদেশের বন্ধুদের সাথেও হরদম যোগাযোগ অব্যাহত রাখি। সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবাদতের জন্য মসজিদে এসে আদৌ কি তবে আমরা একান্ত ও নিবিড় হতে পারলাম? অথচ হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ইতিকাফরত অবস্থায় কোন প্রয়োজনে পাশের ঘরে গেলে, সেখানে কোন অসুস্থ লোক থাকলেও তার হালপুরসি করতেন না। আর আমরা জগত মহাগজতের সংবাদ-বিসংবাদ ও গুজবের ভাণ্ডার খুলে বসে থাকি। আফসোস!

৪. আগে থেকে প্রস্তুতি নিন:

ইতিকাফের জন্য মসজিদে প্রবেশের কিছুদিন আগ থেকেই এ সংক্রান্ত বইপত্র পড়ুন। আলিমদের লেকচার শুনুন এবং তাদের আর্টিকেল লেখাজোখাগুলো খুঁজে খুঁজে পড়ে ফেলুন। নিজের অন্তরে কী কী রোগ বহাল এবং কোন কোন স্বভাব আপনি ছাড়তে পারছেন না, সেগুলো নিয়ে জানাশোনা বাড়ান। এবং পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই তবে আল্লাহর ঘরে দশ দিনের বিশেষ কোর্সে ভর্তি হয়ে যান।

৫. নিজেকে মুক্ত করুন:

যত পাপে অভ্যস্ত ছিলেন, যত গুনাহ এবং অযাচিত কায়কারবার কর বেড়াতেন, আসমানী পাঠশালায় ঢোকার পূর্বেই সেগুলো পরিত্যাগ করে নিজেকে সোনার মানুষে পরিণত করবার দৃপ্ত মানসে ইতিকাফের জন্য প্রস্তুত হোন। কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে, কারো ঋণ বাকি থাকলে, সবকিছু থেকে পরিপূর্ণ মুক্তি হাসিল করে তবেই আল্লাহর ঘরের দিকে রওনা করুন।

৬. অন্ধ হয়ে যান:

আমাদের এক আজব রোগ হলো, নিজে কিছু করি না করি, কে কী করল কে কী করল না, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথার যেন শেষ নেই। এই স্বভাব অপ্রীতিকর, এখুনি বাদ দিয়ে দিন এমন দুর্মুখো মনোভাব। কে কী করল, ঘুমালো না পড়ল, নামাজে থাকল না গল্পগুজবে—আপনি সেগুলো থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিজের চিন্তা করুন। একান্ত কেউ গুনাহ করলে, দীনি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে তাকে সাধ্যমতো বিরত রাখার চেষ্টা করুন।

৭. ঝুলি ভরে নিন পুণ্যের ফসলে:

মনে করুন ইতিকাফ একটি বাজার। আপনাকে একটি বড় ঝুলি দেয়া হয়েছে এখান থেকে প্রয়োজনমাফিক পন্য সংগ্রহের জন্য। কী করবেন আপনি? বসে থাকবেন? আসুন আপনাকে এ বাজারের কিছু সস্তা পন্যের কথা বলি। যে-গুলো অল্প মূল্যে পাবেন, কিন্তু উচ্চমূল্যের উপকার থেকে মাহরুম হবেন না।

• প্রতিদিন সাধ্যমতো অন্য রোজাদারদের মেহমানদারি করুন। একটি সামান্য খেজুরের মাধ্যমেও হতে পারে তা।
• তাহাজ্জিদের জন্য নিজে উঠুন এবং অন্য সকলকে জাগিয়ে দিতে চেষ্টা করুন।
• প্রথম কাতারে একেবারে ইমামের কাছাকাছি নামাজ আদায়ের চেষ্টা করুন।
• দুই নামাজের মধ্যবর্তী সময়গুলোকে নামাজের অন্তর্ভুক্ত রাখার জোর চেষ্টা করে যান।
• প্রতিবার অজু করার পর দু’রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু নিয়মিত আদায় করুন।
• সর্বদা অজুর হালতে পাক-পবিত্র থাকার চেষ্টা করুন।

৮. শয়তানের দ্বার বন্ধ করে দিন:

ইতিকাফের সামান্য সময়ও যেন আপনার অযথা খোশালাপে না কাটে, সেদিকে পূর্ণ মনোযোগী হোন। নামাজের পরপর নিজের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে রুটিনমাফিক আমল শুরু করে দিন। তিলাওয়াত করুন, জিকির করুন এবং দুরুদ শরীফ পড়তে থাকুন। নিজে ইচ্ছে করে নিজের সময় নষ্ট করবেন না এবং অন্য কাউকেও আপনার সময় নষ্ট করার সুযোগ দেবেন না।

৯. চুপ থাকার অভ্যাস গডুন:

চুপ থাকার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। যদি কোন উত্তম কথা বলার সুযোগ তৈরি না হয়, বা প্রয়োজন দেখা না দেয়, তাহলে অনর্থক কথা বাদ দিয়ে একেবারে চুপ থাকার চেষ্টা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ সময়েও এত অল্প কথা বলতেন যে, দিনে তিনি কয়টা বাক্য বলেছেন, তা গোনা যেত। (সহিহ বুখারি: ৩৫৬৭) এটা যদি তাঁর স্বাভাবিক সময়ের কথা হয়, তাহলে ইতিকাফে আমাদের আরও কত সচেতন হওয়া দরকার?

১০. অল্প ঘুমান:

আকাবিরদের অনেকে আল্লাহর কাছে ঘুমের স্বল্পতার জন্য দোয়া করতেন। কেউ সেজদায় সামান্য ঝিমুনি দিতেন, কেউ কথা ও কাজের ফাঁকে বসে বসেই খানিক ঘুমিয়ে নিতেন, এরপর সারাদিন কাজ করতেন, ইবাদাতে মগ্ন হতেন বা তিলাওয়াতে নিবিড় হয়ে পড়তেন। ইতিকাফের দশটা দিনে তাই প্রতিজন মুতাকিফের উচিত কম ঘুমানো। ইবাদত, তিলাওয়াত এবং পুণ্যের কাজে সময়গুলোকে মূল্যবান করে তোলা।

করোনা হতে পারে আমার মুক্তির পয়গাম

চলছে ভয়াবহ মহামারিকাল। স্মরণকালের ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে পুরো পৃথিবী। সময়টা সবদিক থেকেই নিজেদের ক্ষমা প্রার্থনার, দোষ স্বীকার করে আল্লাহর কুদরতি কদমে লুটিয়ে পড়ার। লকডাউনে দুনিয়ার সবচে ব্যস্ত লোকটিও এখন ঘরে, অখণ্ড অবসর তার। এবারের রমজানে তবে ইতিকাফ যেন কারো ছুটে না যায়। পরিবারের পুরুষেরা এমন সুযোগ হয়ত আর পাবো না। তাই মহামারি মহামারি বলে হাহাকার না করে আমরা বরং হাতে আসা এই আত্মগঠনের সুযোগ লুফে নিতে পারি। দশটা দিন নিজেকে পরিবর্তনের নেশায় আসমানি পাঠশালায় ব্যয় করতে পারি। পৃথিবী এই করোনাকালকে স্মরণ করবে সময়ের কাল হিসেবে, নিকৃষ্ট হন্তারক হিসেবে; কিন্তু আপনি যদি এই সুযোগে নিজের জীবনটাকে বদলে নিতে পারেন, হয়ত এই করোনাকে আপনিও স্মরণ করবেন—কিন্তু নিজের দিকবদলের অন্যতম উপলক্ষ হিসেবে; নিজের গুনাহ মাফের সুবর্ণকাল হিসেবে, শয়তানের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে এক আল্লাহর দাসত্বের দিকে ফিরে আসার প্রধান অনুঘটক হিসেবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের কবুল করুন, তাওফিক দিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *